মেলায় হারিয়ে যাওয়া। বাস্তব জীবনে ঘটে যাওয়া গল্প। |
এই ঘটনাটা আমার সাথে ঘটেছিলো। তখন আমি খুব ছোট ছিলাম।কিন্তু ঘটনাটা আজও আমার মনে গেথে আছে।কিভাবে মেলায় হারিয়ে গিয়েছিলাম,কিভাবে রাস্তা চিনে বাড়ি এসেছিলাম সকল কিছুই শেয়ার করবো আপনাদের কাছে।
গ্রামে প্রত্যেক বছরের বাংলা মাসের দুই তারিখে মেলা হত।দু বছর যাবত করোনার জন্য বন্ধ থাকলেও আগে হোত।তো সেই বছর ও মেলা হচ্ছে।
আমি প্রাইমারি স্কুলে পড়ি সম্ভবত ক্লাস টুতে বা থ্রিতে ছিলাম আমার সঠিক মনে নেই।আমি, আমার মেজো আর আমার মেজো বোনের ছেলে তিনজন মিলে মেলায় যাই।
মেলায় যাবার সময় আকাশের অবস্থা ভালো ছিলো, ঝড়ের কোন পুর্বাবাশ ছিলো না।আমি কি কিনেছিলাম মনে নেই আমার বোন কি কিনেছিলো তাও মনে নেই তবে এটা মনে আছে আমার বোনের ছেলের জন্য একটা মাটির টিয়াপাখি কিনেছিলাম।
যেটা বোনের বাড়ি গেলেই দেখতে পেতাম।আজও আছে কিনা জানা নেই কারণ এখন সবাই বড় হয়ে গেছে বোনের ছেলে বিয়ে করে ফেলেছে নিজের ও অনেক বয়স হয়েছে কোথাও যাবার সময় পাইনা তেমন।
তো যা বলছিলাম,তো এসব কিনার পর আমার চাচাতো ভাইয়ের ছেলে আমাদের দেখে ফেলে আর দমকাতে থাকে মেলায় কেনো এসেছি।তাড়াতাড়ি জেনো বাড়ি চলে যাই।এটা বলে আমার ভাইয়ের ছেলেও চলে যায়।আর আমরাও ভয় পেতে থাকি কারন আমরা কেউ বাড়িতে বলে যাইনি।
আর চাচাতো ভাইয়ের ছেলে অবশ্যই বাড়ি গিয়ে বলে দিবে আমরা মেলায় এসেছি।তাই আমরা তাড়াতাড়ি মেলা থেকে বেড়িয়ে পড়ি।আজ থেকে অনেক বছর আগের কথা।
১৭ থেকে ১৮ বছর আগের কথা হবে তখন।মেলার জায়গা থেকে আমাদের বাড়ি মোটামুটি দূরে ছিলো। আমাদের কাছে আর টাকাও ছিলো না যে বাড়ি যাবো গাড়ি দিয়ে।এদিকে আকাশের অবস্থা হুট করেই খারাপ হয়ে যায়।
আমরা তিনজন রাস্তা দিয়ে জোরে জোরে হাটতে থাকি।অনেক হাটার পর ও শেষ রক্ষা হয়নি।রাত হয়ে যায়।আমার বড় আমাদের নিয়ে একটা বাড়ির বাড়ান্ধায় দাঁড়ায় কিন্তু আমি খুব জেদি ছিলাম আর খুব ভয় পেয়েছিলাম।আমি সেখানে দাড়াতে চাইনি, আমি ভেবেছিলাম হয়তো বাড়ি চলে আসতে পাড়বো। কারন আমরা বাড়ি থেক এক পাড়া দুরেই ছিলাম।
আমার কান্নাকাটির ফলে আমার বোন বাধ্য হয় সেই বারান্ধা থেকে বেড়িয়ে আসতে।আমরা আবার হাটা শুরু করি।এদিকে খুব জোরে জোরে বাজ পড়ছে।রাস্তায় মানুষ নেই মেঘের তান্ডবে আমরা ভিজে একাকার।
খুব ভয় পাচ্ছিলাম, আর আমার বোন আমাকে দমক দিচ্ছিলো সেই বারান্ধাতে না দাড়ানোর জন্য।কারন একেতো অন্ধকার হয়ে আসছিলো তার উপর বাজ পড়ছে খুব জোরে ভিজে গেছি রাস্তাঘাট ভুতুরে।
বুঝতেই পারছেন গ্রামের রাস্তা আর দু পাশে কোন বাড়ি নেই।তো এভাবে ভিজেই আমরা আরেকটা বাড়িতে আশ্রয় নেই।সেই বাড়ির মেয়েকে আমার আপু চিনতো।উনার নাম সোনিয়া আপু তাদের পাড়ার পড়েই আমাদের পাড়া।তাদের পাড়া আর আমাদের পাড়া আলাদা করে রেখে একটা জংগল।
না হলে আমারা বাড়িতে এসেই দাড়াতে পাড়তাম।কিন্ত সেই জংগল অনেক ভয়ংকর, কেউ সেখানে একা জায়না তাই আমরা আর সাহস করিনি।আর এইবার কান্না করিনিশুধু মায়ের কথা খুব মনে পড়ছিলো।
আর ভাবছিলাম মা হয়তো মেরেই ফেলবে আমাদের। এদিকে সেই আপুটা তাদের জামাকাপড় দিয়েছে ভিজা জামাকাপড় ছাড়ার জন্য।ঘামছা দিয়েছে ্ হালকা খাবার ও দিয়েছিলো।আসলে আমাদের অনেক ক্ষুধা লেগে গিয়েছিলো।
এদিকে অনেক রাত হয়ে যাচ্ছে ঝড় কমছেনা।এভাবে অনেক ঝড় হলো। তারপর যখন ঝড় থামলো তখন সোনিয়া আপুর চাচা আমাদের তিনজনেকে নিয়ে আমাদের বাড়ি দিয়ে গেছিলো।
বাড়ি আসার পর দেখি মা অনেক কাঁন্না করেছে।এই ঝড়ের মাঝেই চাচাতো ভাইয়ের ছেলেকে মেলায় পাঠিয়েছে খোঁজে আনার জন্য।এদিকে আমার ভাইয়ের ছেলেকে খোঁজে পাওয়া যাচ্ছিলো না।
মানে সবাই খুব অস্থির হয়ে গেছিলো। তারপর আমার ভাইয়ের ছেলেকেও খোঁজে পায়।সেদিনের ঝড়ে অনেকের অনেক ক্ষতি হয়েছিলো।
সেদিন আমি একটা শিক্ষা পেয়েছিলাম,পরিবারকে না জানিয়ে কোথাও যাওয়া উচিত না।বড়দের সিদান্তকে সব সময় প্রাধান্য দেওয়া উচিত।
জানিনা এটা আপনাদের কেমন লেগেছে তবে সেদিনের ভয়,কাপড় দিয়ে টুপ টুপ করে পড়তে থাকা পানি।ঘুটঘুটে অন্ধকার আজও মনে গেথে আছে আমি ভুলতে পারিনি।কখনো হয়তো পাড়বো না।
এমন কোন কাহিনি যদি আপিনাদের থেকে থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট বক্সে শেয়ার করতে ভুলবেন না।
আজ এই পর্যন্তই।আল্লাহ হাফেজ।
0 Comments